আখেরাতে সফলতা লাভের পথ

আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁর বান্দাদের সৃষ্টি করেছেন তারা যেন তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সর্বদা ইবাদতে মশগুল থাকে। আর এর প্রতিদান হিসেবে তিনি চান তাঁর বান্দারা পরবর্তী জীবনে (আখেরাতে) যেন আরাম-আয়েশে থাকে। জান্নাত হোক তাদের স্থায়ী আবাস। কোন পথে চললে আমরা আখেরাতে নাজাত পাব তা কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আখেরাতে নাজাতের প্রথম শর্ত হলো ইমান। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘মহাকালের শপথ, সব মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে পড়ে আছে, সে লোকগুলো ব্যতীত যারা ইমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে।’ (সুরা আসর ১-৩)। আমাদের মনে রাখতে হবে, কারও অন্তরে যদি ইমান না থাকে সে যত ভালো কাজই করুক না কেন আখেরাতে তার কোনো মূল্যই নেই। অর্থাৎ ইমানবিহীন আমলের কোনো গুরুত্ব নেই। তাহলে ইমান কী? ইমান হলো আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস এবং রসুল (সা.)-এর আদর্শের ওপর জীবন পরিচালনা করা। একে অন্তরে ধারণ করে কর্মের মাধ্যমে জীবনে প্রতিফলন ঘটানোই হলো ইমান। এই ইমানকে মজবুত করতে হলে আমাদের আমলে সালেহ এর মাধ্যমে জীবন গড়তে হবে। আমলে সালেহ কী? আমলে সালেহ বলতে বোঝায় নেক আমল। যা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোরআন ও হাদিসের আলোকে নেক আমল করা। সালেহ শব্দের অর্থ হলো সঠিক পদ্ধতিতে আমল করা। আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন তো হচ্ছে সেসব লোক, যারা ইমানদার এবং তারা এমন যে, যখন আল্লাহতায়ালার নাম নেওয়া হয় তখন তাদের হৃদয় কম্পিত হয় এবং যখন তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করা হয় তখন তাদের ইমান বৃদ্ধি পায় উপরন্তু তারা তাদের মালিকের ওপর নির্ভর করে।’ (সুরা আনফাল-২)। ‘যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদের যা কিছু অর্থ সম্পদ দান করেছি, তা থেকে তারা আমারই পথে খরচ করে।’ (সুরা আনফাল-৩)। আমাদের মনে রাখতে হবে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য রসুল (সা.) যে পদ্ধতিতে ইবাদত বন্দেগি করেছেন আমাদেরও ঠিক সেই পদ্ধতিতে ইবাদত বন্দেগি করতে হবে। তাই আমাদের নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, দান-সাদকা সবকিছু রসুল (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণ করে করতে হবে। এভাবেই যদি আমরা আমলে সালেহ করতে পারি, তাহলে আমরা আখেরাতে নাজাত পাওয়ার আশা রাখি। ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি বেশি বেশি নফল ইবাদত করা উত্তম। এতে অনেক বেশি সওয়াব অর্জন করা সম্ভব। যা আখেরাতের জীবনে সফলতা পেতে সাহায্য করবে। এই নফল ইবাদত হলো তাহাজ্জুদ নামাজ, বিশুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ, তসবিহ তাহলিল, দান-সাদকা ইত্যাদি। নফল হলো ফরজের অতিরিক্ত। একজন অফিস কর্মচারী তার প্রতিদিনের ডে ওয়ার্ক করার পরও অতিরিক্ত কাজ করার কারণে বসের কাছে ভালো কর্মচারী হিসেবে নিজের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হন তেমনি একজন বান্দা ফরজ ইবাদত পালন করার পর নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেও সক্ষম হন। যা আখেরাতের জীবনে সফলতা পাওয়ার জন্য বিশেষ সহায়তা লাভ করতে সাহায্য করবে। তাই ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি আমাদের সবার উচিত বেশি বেশি নফল ইবাদত করে সওয়াব অর্জন করা। আল্লাহতায়ালা যাদের নিসাব পরিমাণ সম্পদ দান করেছেন তাদের জন্য জাকাত আদায় করা ফরজ। এক্ষেত্রে কোনো রকম গড়িমসি করা যাবে না। মানুষের দেহের ময়লা যেমন সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে নিলে পরিষ্কার হয় তেমনি জাকাত আদায়ের মাধ্যমে ধনসম্পদ পরিশুদ্ধ ও পবিত্র হয়। জনৈক ব্যক্তি রসুল (সা.)-কে বললেন, আপনি আমাকে এমন আমলের কথা বলে দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তিনি বললেন, ‘তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না, নামাজ কায়েম করবে, জাকাত আদায় করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার